”প্রাণ প্রবাহ” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশন, ডুপডা’র বার্ষিক স্মরণিকার নাম। প্রতি বছর পুনর্মিলনী উপলক্ষে এটি প্রকাশিত হয়ে থাকে। এবারে, ২০২৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশন ডুপডা’র আয়োজনে টিএসসিতে মহামিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক এ কর্মযজ্ঞ উপলক্ষে ”প্রাণ প্রবাহ” তে বাণী প্রদান করেছেন অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী, চেয়ারম্যান, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুপডা)
ঢাবি সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যেশ্যে তাঁর এই বাণী এখানে পুনঃ প্রকাশ করা হলো।
-ডুপডা প্রচার সেল।
بسم الله الرحمن الرحيم
অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী
চেয়ারম্যান, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুপডা)
সভাপতির বক্তব্য
মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষী দর্শন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এর ১৪তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান মহাসমারোহে উদযাপিত হতে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে পাশ করা প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ড্রপডা) এর প্রধান উদ্দেশ্যই হলো প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলী ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন। সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও মেলবন্ধনের মাধ্যমে ঐক্যবোধ সৃষ্টি ও তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সংগঠনের মূল লক্ষ্য। অ্যালামনাই উদ্যোগে বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান, পুনর্মিলনী ও বনভোজন আয়োজনসহ নানাবিধ কল্যাণধর্মী কাজের উদ্যোগ নেওয়া ডুপডার কাজ ।
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিনটিতে একই সাথে দর্শন বিভাগও প্রতিষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে দর্শন বিভাগেরও শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। আমরা সকল মহলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সফলতার সাথে ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর দর্শন বিভাগের শতবর্ষ উদযাপন করতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এ বিভাগের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক জি এইচ ল্যাংলি। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আইনের যে বিল অনুমোদন লাভ করে সেটি প্রণয়নে ল্যাংলি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সে সময়ে তিনি ঢাকা কলেজের দর্শনের খ্যাতিমান অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের মাস্টার্স। ঢাকা হলের প্রভোস্ট হিসেবে তিনি তাঁর প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে দক্ষতার পরিচয় রাখেন। অধ্যাপক ল্যাংলি মৌলিক দর্শনের চর্চাও করেছেন। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক ল্যাংলি দীর্ঘ সময় জানুয়ারি ১৯২৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৪ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য ছিলেন। হার্টগ-ল্যাংলির নেতৃত্বের এক যুগেরও বেশি সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
প্রথম উপাচার্য ড. ফিলিপ হার্টগ এবং পরবর্তীতে কয়েকজন স্বনামধন্য উপাচার্য মহোদয়দের নামে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কয়েকটি ছাত্রাবাস ও মিলনায়তনের নামকরণ করা হলেও আজ পর্যন্ত দ্বিতীয় উপাচার্য জি এইচ ল্যাংলির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাঁর নামে কোনো স্মৃতি স্মারক স্থাপন করা হয়নি ।
আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর অধ্যাপক জি এইচ ল্যাংলির স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্মারক স্থাপনের জন্য এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দাবি জানাচ্ছি। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন পরিবারের একটি মৌলিক দাবি।
স্বল্পতম জীবনে মানব কল্যাণে যাতে বেশি বেশি অবদান রেখে আমরা পৃথিবী থেকে প্রস্থান করতে পারি সে প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত রাখা দরকার। এ বছর অ্যালামনাইদের সহযোগিতায় কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সীমিত সামর্থ্যের মধ্য থেকে আমরা বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এজন্য আল্লাহর দরবারে শোকর জানাই। বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠান উদযাপন, বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং দর্শন বিভাগের আমাদের প্রয়াত শিক্ষকদের প্রয়াণ উপলক্ষ্যে শোকসভা আয়োজন, ঈদ পুনর্মিলনী, বনভোজনসহ আজকের ১৪তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে অ্যালামনাইদের
মাঝে ঐক্য ও প্রাণের যে স্পন্দন আমি লক্ষ করেছি, তাতে আমি উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত। নির্দিষ্ট কারো নাম উল্লেখ না করেও আমি বলতে চাই যারা এই আয়োজনের পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা ব্যয় করে অনুষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের ছাপ রেখেছেন তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করছি।
দর্শন বিভাগের অফিস স্টাফদের মধ্যে যাঁরা এ অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন, নানাভাবে কাজে সহায়তা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রাক্তন ও নবীনদের এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণকারী সকল সদস্য, তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আপ্যায়নের ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের একটি বিরাট দায়িত্ব পালন করে আমাদের একজন প্রাক্তন ছাত্র এবারও আমাদের চাপ মুক্ত করেছেন। তাঁর এই মহৎ কাজটির জন্য তাঁর প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। পরম করুণাময়ের দরবারে তাঁর ও তাঁর পরিবারের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল প্রার্থনা করছি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বাণী প্রদান করেছেন। উপাচার্য মহোদয় প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়া শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করে আমাদেরকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। মাননীয় বিশেষ অতিথিবৃন্দ ও সম্মানিত অতিথিগণ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন, তাঁদের সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। যেসব প্রতিষ্ঠান ‘স্মারক’ গ্রন্থের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদান করেছেন, যাঁরা অন্যান্যভাবে আর্থিক সহায়তা করেছেন, তাঁদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। স্বল্প সময়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করতে হয়েছে। এর সাফল্যের কৃতিত্ব এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের এবং এর ত্রুটি-বিচ্যুতির দায়ভার সবটাই অনুষ্ঠানটির আহ্বায়ক হিসেবে আমার। সবাই ভালো থাকুন আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনাই করি।
-শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী।